নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) - এর জন্ম সম্পর্কে ইসলামী ঐতিহ্য এবং ইতিহাসে কিছু বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে) মক্কা নগরীতে কুরাইশ গোত্রের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মায়ের নাম আমিনা। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্মের সময়কালকে "আমুল ফীল" বা "হাতির বছর" বলা হয়, কারণ এই বছরে ইয়েমেনের শাসক আবরাহা একটি বিশাল হাতির বাহিনী নিয়ে মক্কার উপর আক্রমণ করতে আসে, কিন্তু অলৌকিকভাবে তারা পরাজিত হয়। এই ঘটনাটি কুরআনে "সূরা ফীল"-এ উল্লেখ রয়েছে।
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্মের সময় তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন, এবং তিনি তাঁর মা আমিনার তত্ত্বাবধানে বড় হন। শৈশবকাল থেকেই মুহাম্মাদ (সাঃ) তার সততা, সতর্কতা এবং মাধুর্যপূর্ণ চরিত্রের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁর জীবনের এই প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি একজন বিশ্বস্ত এবং সৎ ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করেন, এবং পরবর্তী সময়ে আল্লাহর প্রেরিত নবী হিসেবে মানবজাতিকে দিকনির্দেশনা দেন।
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্মের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
জন্ম সাল: ৫৭০/৫৭১ খ্রিস্টাব্দ
জন্মস্থান: মক্কা, সৌদি আরব
পিতা: আবদুল্লাহ
মাতা: আমিনা
বংশ: কুরাইশ গোত্র
শৈশব পরিচিতি: সততা, সতর্কতা, এবং মাধুর্যপূর্ণ চরিত্র
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মা আমিনা বিনতে ওহাব ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু বরণ করেন, যখন মুহাম্মাদ (সাঃ) মাত্র ছয় বছর বয়সে ছিলেন। আমিনার মৃত্যু ঘটে তখন, যখন তিনি মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন।
মৃত্যুস্থল:
আমিনার মৃত্যুস্থান হিসেবে 'আবওয়া' নামক স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখিত। আবওয়া মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী একটি স্থান।
ঐতিহাসিক বিবরণ:
মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর মা আমিনার সাথে মদিনায় গিয়েছিলেন তাঁর পিতার কবর পরিদর্শন করতে এবং কিছু আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে।
মদিনা থেকে ফেরার পথে, আমিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আবওয়া নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।
আমিনার মৃত্যুর পর, মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে তাঁর দাসী উম্মে আইমান মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
সংক্ষেপে:
মৃত্যু সাল: ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যুকালে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স: ৬ বছর
মৃত্যুস্থল: আবওয়া, মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থান
মৃত্যুর পরের ঘটনা: মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে উম্মে আইমান মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যান, এবং পরে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে লালিত-পালিত হন।
ঐতিহাসিক উৎসের নির্ভরযোগ্যতা:
এই ঘটনাগুলো মূলত নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সীরাত গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়, যেমন ইবন ইসহাক এবং ইবন হিশাম-এর জীবনী থেকে।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স ছিল প্রায় আট বছর। আবদুল মুত্তালিব ছিলেন মক্কার কুরাইশ গোত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কাবার রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি তাঁর নাতি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর লালন-পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বাবা আবদুল্লাহ-এর মৃত্যু এবং তাঁর মা আমিনা বিনতে ওহাব-এর মৃত্যুর পর, আবদুল মুত্তালিব মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে তাঁর নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন এবং তাঁকে নিয়ে গভীর স্নেহশীল ছিলেন।
মৃত্যুর সময় এবং পরবর্তী ঘটনা:
আবদুল মুত্তালিব যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তিনি অনুভব করেন যে তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিবকে দায়িত্ব দেন যাতে তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর লালন-পালনের ভার নেন। আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকেন।
মৃত্যু সাল: ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যুকালে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স: ৮ বছর
মৃত্যুর পরের ঘটনা: মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে চলে যান।
ঐতিহাসিক উৎসের নির্ভরযোগ্যতা:
এই ঘটনাগুলো নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সীরাত (জীবনী) গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়, যেমন ইবন ইসহাক এবং ইবন হিশাম-এর সীরাতে উল্লেখিত আছে।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর পরিচয় এবং বিবাহ ইসলামী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাদের সম্পর্ক ছিল গভীর এবং শ্রদ্ধাশীল, যা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুওয়াতের শুরুর সময়গুলোতে অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
পরিচয়:
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর পরিচয় ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে ঘটে। হযরত খাদিজা (রাঃ) ছিলেন মক্কার একজন সম্মানিত এবং সফল ব্যবসায়ী নারী। তিনি তাঁর ব্যবসার জন্য একজন বিশ্বস্ত ও সৎ কর্মচারীর সন্ধান করছিলেন, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সততা এবং বিশ্বস্ততার জন্য পরিচিত ছিলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) খাদিজা (রাঃ)-এর জন্য একটি বাণিজ্যিক অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি শামে একটি বাণিজ্যিক যাত্রা পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি অসাধারণ দক্ষতা, সততা এবং সাফল্য প্রদর্শন করেন। ব্যবসায়িক যাত্রার পর খাদিজা (রাঃ) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর সততা ও সক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন।
বিবাহ:
খাদিজা (রাঃ) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন এবং তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বয়স ছিল ২৫ বছর, এবং খাদিজা (রাঃ)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিজা (রাঃ) ইতিপূর্বে দুইবার বিবাহিত হয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন দুই সন্তানের জননী। মুহাম্মাদ (সাঃ) খাদিজা (রাঃ)-এর প্রস্তাব গ্রহণ করেন, এবং তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই বিয়ে ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং সুখের। খাদিজা (রাঃ) ছিলেন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রথম স্ত্রী, এবং তাঁর জীবদ্দশায় মুহাম্মাদ (সাঃ) আর কোনো স্ত্রী বিয়ে করেননি।
সম্পর্ক:
হযরত খাদিজা (রাঃ) নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্য একজন সমর্থনকারী এবং বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন। নবুওয়াতের শুরুর দিনগুলোতে তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সবসময় সমর্থন ও সাহস যুগিয়েছেন। খাদিজা (রাঃ) প্রথম নারী যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। তাদের সংসার ছিল অত্যন্ত সুখী এবং পবিত্র। আল্লাহ তাঁদেরকে ছয়টি সন্তানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন।
সন্তান:
মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং খাদিজা (রাঃ)-এর ছয়টি সন্তান ছিল
• কাসিম
• আবদুল্লাহ (তাহির এবং তয়্যিব নামেও পরিচিত)
• জয়নাব
• রুকাইয়া
• উম্মে কুলসুম
• ফাতিমা (রাঃ)
ঐতিহাসিক উৎসের নির্ভরযোগ্যতা:
এই ঘটনা ইসলামের প্রাথমিক জীবনী ও ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে, যেমন ইবন ইসহাক এবং ইবন হিশাম-এর সীরাতে। এছাড়াও, সাহিহ হাদিসগুলোতেও মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং খাদিজা (রাঃ)-এর সম্পর্কের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
৬১০ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রথম প্রকাশ (ওহি) ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সময়ে তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী হিসেবে তাঁর নবুওয়াতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এই ঘটনাটি ইসলামী ঐতিহ্যে "পহেলা ওহি" বা "প্রথম প্রকাশ" নামে পরিচিত। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) তখন মক্কার একজন সম্মানিত ও সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সততা, ন্যায়বোধ, এবং দারিদ্রপীড়িতদের প্রতি সহানুভূতির জন্য তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তবে, তিনি মক্কার সমাজের অসামঞ্জস্যতা, সামাজিক অবিচার, এবং পৌত্তলিকতার প্রতি গভীরভাবে মর্মাহত ছিলেন। তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথে আল্লাহর নির্দেশনা খুঁজছিলেন।
হেরা গুহায় ধ্যান:
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রায়ই মক্কার নিকটবর্তী "জাবাল আন-নূর" বা "আলোর পাহাড়"-এ অবস্থিত হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এই ধ্যানের সময় তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য প্রার্থনা করতেন এবং মানবজাতির জন্য সঠিক পথের সন্ধান করতেন। এই গুহায় ধ্যানের সময়ই তিনি প্রথম ওহি লাভ করেন।
প্রথম ওহি লাভ:
৬১০ খ্রিস্টাব্দের এক রাতে গুহায় ধ্যান করার সময়, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রথম ওহি লাভ করেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর কাছে এসে আল্লাহর বাণী পাঠ করেন। প্রথম ওহির ঘটনাটি হাদিস এবং কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
কুরআনের সূরা আল-আলাক-এর প্রথম পাঁচটি আয়াত ছিল প্রথম ওহি:
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
অর্থ:
পাঠ করুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। পাঠ করুন, এবং আপনার প্রভু সর্বাধিক সম্মানিত, যিনি কলমের দ্বারা শিখিয়েছেন, মানুষকে যা কিছু সে জানত না।
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতিক্রিয়া:
প্রথম ওহি লাভের পর মুহাম্মাদ (সাঃ) খুবই মর্মাহত এবং ভীত হয়ে পড়েন। তিনি গুহা থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরে যান এবং তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)-এর কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করেন। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে শান্ত করেন এবং তাঁর কথায় বিশ্বাস রাখেন। তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে নিয়ে তাঁর চাচা ওয়ারাাকা ইবন নওফল-এর কাছে যান, যিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং ধর্মীয় গ্রন্থের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ওয়ারাাকা ইবন নওফল মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে জানান যে, যে দেখা দিয়েছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সত্যিকারের ওহি এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত নবী।
ওহি পাওয়ার পরের জীবন:
প্রথম ওহি পাওয়ার পর, মুহাম্মাদ (সাঃ) ধীরে ধীরে আল্লাহর বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি তাঁর নিকটবর্তী আত্মীয় এবং বন্ধুদের মধ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মক্কার মানুষদের প্রতি ইসলামের দাওয়াত (প্রচার) দেন। তাঁর নবুওয়াতের প্রথম ১৩ বছর মক্কায় কাটানো হয়, যেখানে তিনি তৌহিদ (একত্ববাদ), ন্যায়বিচার এবং মানবতার শিক্ষা প্রচার করেন।
৬১৩ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ইসলামের উন্মুক্ত দাওয়াত (প্রচার) শুরু করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথমে তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার করলেও, পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন প্রথম ওহি লাভ করেন, তখন তিনি প্রথম তিন বছর ইসলাম গোপনে প্রচার করেন। এই সময়ে তিনি প্রথমে তাঁর নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং কাছের পরিচিতদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন। যাঁরা তাঁর নিকট বিশ্বাসযোগ্য এবং সৎ ছিলেন, তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন। এই সময়কালে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা ছিল সীমিত এবং তাঁদের উপর মক্কার নেতারা তেমন নজর দেয়নি।
উন্মুক্ত দাওয়াতের সূচনা:
৬১৩ খ্রিস্টাব্দে, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ পান উন্মুক্তভাবে ইসলাম প্রচার করার জন্য। কুরআনের সূরা আশ-শু'আরা-এর ২১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দেন
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
অর্থ:
আপনার নিকটবর্তী আত্মীয়দের সতর্ক করুন।
এই নির্দেশ পাওয়ার পর, মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কার "সাফা" পাহাড়ে উঠে মক্কার কুরাইশ গোত্রের লোকদেরকে আহ্বান জানান। তিনি তাঁদের কাছে ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ তাঁকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং সবাইকে তাওহিদের (একত্ববাদ) দাওয়াত দেন। তিনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং পৌত্তলিকতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উন্মুক্ত দাওয়াতের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। অনেকেই তাঁর প্রতি অবিশ্বাস প্রকাশ করেন এবং তাঁকে বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তাঁর নিজের কুরাইশ গোত্রের লোকেরাও তাঁর বিরোধিতায় নেমে আসে। বিশেষ করে তাঁর চাচা আবু লাহাব প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তাঁকে অপমান করতে থাকেন।
তবে, মুহাম্মাদ (সাঃ) দৃঢ়তা নিয়ে ইসলামের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন এবং যাঁরা সত্যের পথে আসতে চান, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসার সাথে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি কঠোর পরিস্থিতি সত্ত্বেও ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর অবিচল বিশ্বাস প্রদর্শন করেন।
ইসলামের প্রচার ও বিরোধিতা:
মুহাম্মাদ (সাঃ) উন্মুক্তভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করার পর, মক্কার কুরাইশ নেতারা তাঁর প্রচার রুখে দেওয়ার জন্য নানা রকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ইসলামের প্রতি কুরাইশ নেতারা ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের উপর অত্যাচার করতে শুরু করে। তবে, ইসলামের দাওয়াত ধীরে ধীরে মক্কার মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে থাকে, এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন।
সংক্ষেপে:
উন্মুক্ত দাওয়াতের বছর: ৬১৩ খ্রিস্টাব্দ
প্রথম প্রকাশ্য দাওয়াতের স্থান: সাফা পাহাড়, মক্কা
প্রথম প্রকাশ্য দাওয়াতের প্রতিক্রিয়া: মিশ্র প্রতিক্রিয়া; কুরাইশ নেতাদের বিরোধিতা
ইসলামের বিস্তার:
ক্রমশ ইসলাম প্রচারিত হতে থাকে, এবং মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এই ঘটনা ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহস, দৃঢ়তা এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাস ইসলামের উন্মুক্ত প্রচারের জন্য একটি মূল প্রেরণা ছিল, যা পরবর্তী সময়ে ইসলামের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৬১৭ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বয়কট আরোপ করে, যা ইসলামের ইতিহাসে "শিবে আবু তালিবের বয়কট" নামে পরিচিত। এই বয়কটের লক্ষ্য ছিল নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং ইসলামের প্রচার বন্ধ করা। বনু হাশিম গোত্র, যা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিজের গোত্র, এই বয়কটের প্রধান শিকার ছিল।
বয়কটের কারণ:
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ইসলামের উন্মুক্ত দাওয়াত শুরু করার পর মক্কার কুরাইশ নেতারা ক্রমাগত তাঁর বিরোধিতা করে আসছিল। তারা দেখল যে, তাদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসলাম প্রচারিত হতে থাকছে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, কুরাইশ নেতারা একটি চরম পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বয়কটের শর্তাবলী:
বয়কটের ফলাফল:
বয়কটের সমাপ্তি:
সংক্ষেপে:
বয়কটের বছর: ৬১৭ খ্রিস্টাব্দ
বয়কটের স্থায়িত্ব: প্রায় তিন বছর
বয়কটের স্থান: শিবে আবু তালিব, মক্কার নিকটবর্তী একটি উপত্যকা
বয়কটের প্রভাব: খাদ্য ও পানির অভাব, চরম দুঃখ-দুর্দশা
বয়কটের সমাপ্তি: কিছু ন্যায়পরায়ণ কুরাইশ নেতাদের উদ্যোগে বয়কটের চুক্তি বাতিল করা হয়
এই বয়কট ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত কঠিন সময়কাল ছিল, তবে এটি মুসলমানদের ধৈর্য, বিশ্বাস, এবং ঐক্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার একটি প্রধান উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়।
ইসলামী ভাষ্যমতে মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে ইসরা নামে পরিচিত। পবিত্র হাদিস শরীফ ও সাহাবা-আজমাঈ'নদের বর্ণনানুযায়ী, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বুরাক (একটি ঐশ্বরিক বাহন বিশেষ)'এ করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এ সময় তিনি বেহেশ্ত ও দোজখ অবলোকন করেন এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসা নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই যাত্রা মুসলমানদের কাছে মি'রাজ নামে পরিচিত।
৬২১ খ্রিষ্টাব্দে (নবুয়তের দ্বাদশ বছরে) মুহাম্মদ(সঃ) হজের সময়ে মদিনা থেকে আগত একদল লোকের সাথে সাক্ষাত করলেন ।এই দলের ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জনই ছিলো মদিনার উল্লেখযোগ্য গোত্র বনু খাযরাজ ও বনু আউস গোত্রের লোক। তারা মিনার কাছে আকাবা উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে রাসুলের নিকট ইসলামের শপথ বাক্য পাঠ করেন। শপথনামা।
• আমরা একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করব।
• আমরা ব্যভিচারে লিপ্ত হব না।
• আমরা চুরি-ডাকাতি বা কোনোরূপ পরস্ব আত্মসাৎ করব না।
• আমরা সন্তান হত্যা বা বলিদান করব না।
• কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ বা দোষারোপ করব না।
• প্রত্যেক সৎকাজে আল্লাহর রাসুলকে মেনে চলব এবং কোনো ন্যায় কাজে তার অবাধ্য হব না।
নবদীক্ষিত মদিনাবাসির এই শপথ বা বাইয়াতকে আল আকাবার প্রথম শপথ বা বাইয়াতে আকাবা উলা নামে পরিচিত
আল-আকাবার প্রথম শপথের পরবর্তী বছর (৬২২ খ্রি.) মদিনা থেকে আরও ৭৩ জন লোক এসে হজরত (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাদের দেশে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানালেন। তারা ধর্মপ্রচারে হজরতের সব ধরনের সাহায্য করতে এবং ইসলামকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেন। এটাই আল-আকাবার দ্বিতীয় শপথ। ইয়াসরিবের মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইতিপূর্বে প্রেরিত মুসাবও এ দলের সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি হজরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মদিনায় ইসলামের দ্রুত প্রসারের কথা জানালেন।
৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বনু আওস এবং বনু খাজরাজ সম্প্রদায় দুটির মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ।[২] তাই কলহে লিপ্ত এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন ও মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত
৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের নামাজের কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরিবর্তন আল্লাহর নির্দেশে সংঘটিত হয়, এবং এটি মুসলিম উম্মাহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং মুসলমানরা নামাজের সময় বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেমে অবস্থিত) দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। এটি ছিল ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরও মুসলমানরা এই কিবলা অনুসরণ করতে থাকেন।
কিবলা পরিবর্তনের কারণ:
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে মক্কার কাবাকে কিবলা হিসেবে নির্ধারণের জন্য প্রার্থনা করছিলেন। কাবা ছিল হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর তৈরি প্রথম তৌহিদী ঘর এবং এটি আরবদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিল। কুরআনে এই কিবলা পরিবর্তনের বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ আসে।
কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা:
৬২৩ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ২য় বছর), মদিনায় যখন মুসলমানরা যোহরের নামাজ আদায় করছিলেন, তখন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি ওহি আসে, যাতে বলা হয় যে, কিবলা পরিবর্তন করে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে হবে। কুরআনে এই নির্দেশনা সূরা আল-বাকারা (২:১৪৪) এ উল্লেখ করা হয়েছে,
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُۥ
অর্থ:
তুমি বারবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাতে থাক, আমি অবশ্যই তোমাকে এমন একটি কিবলার দিকে ঘোরাবো যা তোমার পছন্দ হবে। সুতরাং তুমি তোমার মুখ ঘুরাও মসজিদুল হারামের (কাবা) দিকে। আর তোমরা যেখানে থাক না কেন, তোমরা তোমাদের মুখ সেদিকে ফিরাও।
এই ওহি পাওয়ার পরই নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজের মধ্যে কিবলার দিক পরিবর্তন করেন, এবং মুসলমানরাও তাঁর সাথে সেই দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে শুরু করেন। এই ঘটনাটি "মসজিদ আল-কিবলাতাইন" নামে পরিচিত মসজিদে সংঘটিত হয়, যার অর্থ "দুই কিবলার মসজিদ।"
প্রতিক্রিয়া:
কিবলা পরিবর্তন মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের কারণ হয়, কারণ কাবা ছিল তাঁদের পূর্বপুরুষদের পবিত্র স্থান।
মদিনার ইহুদিরা এতে হতাশ হয়, কারণ বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা হিসেবে মেনে নেওয়া ছিল তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিবলার পরিবর্তনের ফলে ইহুদিরা মুসলমানদের থেকে আরও দূরে সরে যায়।
এই পরিবর্তন মুসলিম উম্মাহকে একটি পৃথক ধর্মীয় পরিচয় প্রদান করে, যা তাদেরকে অন্যান্য ধর্ম থেকে আলাদা করে।
বদরের যুদ্ধ (غزوة بدر) ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এতে জয়ের ফলে মুসলিমদের ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
উহুদের যুদ্ধ ( غزوة أحد ) ৩ হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) উহুদ পর্বতের সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে মুহাম্মাদ (সা) ও আবু সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রধান যুদ্ধসমূহের মধ্যে এটি দ্বিতীয়।
খন্দকের যুদ্ধ ( غزوة الخندق) বা আহযাবের যুদ্ধ ( غزوة الاحزاب) ৫ হিজরিতে (৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ) সংঘটিত হয়। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। জোট বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ এবং সেসাথে তাদের ৬০০ ঘোড়া ও কিছু উট ছিল। অন্যদিকে মদিনার বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩,০০০। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসলাম পূর্বের চেয়ে আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠে।
হুদাইবিয়ার সন্ধি (صلح الحديبية), ষষ্ঠ হিজরীর জ্বিলকদ মাসে (মার্চের ৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে) মদিনা শহরবাসী এবং কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই সন্ধিটি একটি দশ বছর শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে এবং মুহাম্মদ (সা.) তার জীবনের বিশ্রামের জন্য তীর্থের সময় মক্কার দিকে আসতে অনুমোদন করে।
৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ (সঃ) দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো এবং মুহাম্মাদ (সঃ) বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন।
বিদায় হজ্জের ভাষণ ১০ম হিজরিতে অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জ পালনকালে আরাফাতের ময়দানে ইসলাম ধর্মের শেষ রাসুল মুহাম্মাদ (স:) কর্তৃক প্রদত্ত খুৎবা বা ভাষণ। হজ্জ্বের দ্বিতীয় দিনে আরাফাতের মাঠে অবস্থানকালে অনুচ্চ জাবাল-এ-রাহমাত টিলার শীর্ষে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তিনি এই ভাষণ দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (স:) জীবিতকালে এটা শেষ ভাষণ ছিলো, তাই সচরাচর এটিকে বিদায় হজ্জ বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এই ভাষণে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিলো।
অবশেষে ৮ই জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে রবিবারে বা ১১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দিন সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় আয়িশার গৃহে মৃত্যুবরণ করেনএ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।