ছয় প্রকার গৃহপালিত পশু দিয়ে কোরবানি করা যায়। এগুলোর মধ্যে তিন প্রকার হচ্ছে বড় এবং তিন প্রকার ছোট। ছোট তিন প্রকার হচ্ছে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলো একেকটি শুধু একজনের পক্ষ থেকেই কোরবানি করা যায়। বড় তিন প্রকার হচ্ছে উট, গরু ও মহিষ। একেকটি বড় পশুতে সাতজন পর্যন্ত শরীক হয়ে কোরবানি করতে পারে। বড় পশুতে সাতজন হওয়া জরুরি নয়। সাতের চেয়ে কম শরীক মিলেও বড় পশু কোরবানি করা জায়েয। শরীকরা ছাড়া যদি দুই এক অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়, তাহলে সবার সম্মতিক্রমে রাসূলুল্লা (সাঃ) বা কোনো মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করে দেয়ার আবকাশ আছে,বরং তা করে দেওয়া মুস্তাহাব। এক্ষেত্রেও শরীকদের মূল অংশগুলো সমান হতে হবে। যদি কোনো প্রকার বেশকম হয়, তাহলে কোরবানি ঠিক হবে না।
[বাদায়ে' সানায়ে': ১০/২৭৯, ফাতহুল কাদীর: ২২/৮৭]৭]
মাসয়ালা : বড় পশুতে যেমনিভাবে সাতজন শরীক হওয়া জায়েয, তেমনিভাবে সাতের কম ব্যক্তি মিলেও কোরবানি করা জায়েয। এমনকি সাতের বিভাজন ঠিক রেখে বেশকম অংশ নিয়েও কোরবানি করা জায়েয। যেমন- তিন ব্যক্তি মিলে একটি গরু কোরবানি করবে; কিন্তু তাদের ভাগ হচ্ছে এমন যে, এক ব্যক্তির সাতের তিন অংশ এবং অপর দুই জনের সাতের দুই অংশ করে। এভাবে কোরবানি করলেও জায়েয হবে। যদি সাতজন মিলে পাঁচটি গরু কোরবানি করে, তাহলেও প্রত্যেকের কোরবানি সহীহ হবে। কেননা, তখন প্রত্যেক শরীকের পক্ষ থেকে প্রতিটি গরুর পাঁচ সপ্তমাংশ কোরবানি করা হবে।
[বাদায়ে' সানায়ে': ১০/২৭৯]
মাসয়ালা: সাতজন শরীক হয়ে কোরবানি করা যায়, এমন পশু একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করাও জায়েয; বরং সামর্থ্যবানদের জন্যে উত্তম
মাসয়ালা: একটি বড় পশুতে যদি আটজন শরীক হয়, তাহলে কারো কোরবানি সঠিক হবে না। এমনকি এক-সপ্তমাংশে যদি দুইজন টাকা দিয়ে শরীক হয়, তাহলেও সবার কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবেনা।
মাসয়ালা : একটি উটেও সাতজন শরীক হওয়া যায়। উটের মধ্যে সাত জন শরীক হওয়ার মাসয়ালায় কোনো মতবিরোধ নেই। একটি উটে দশ জন শরীক হওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। মতবিরোধের ঊর্ধ্বে আমল করার মধ্যেই রয়েছে সাবধানতার পরিচয়।
[মাসায়েলে ঈদাইন ও কোরবানি: ১২৬]
কোরবানির গোশত নিজে খাবে, আত্মীয়স্বজনকে দেবে এবং ফকির মিসকিনকে খয়রাত করবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ খয়রাত করা উত্তম এক্ষেত্রে ত্রুটি করা উচিত নয় তবে কেউ যদি সামান্য খয়রাত করে, তা হলেও কোনো গুনাহ হবে না
মাসয়ালা: বড় পশুতে যদি একাধিক ব্যক্তি শরীক হয়, তাহলে গোশত অনুমান করে ভাগ করবে না; বরং দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে খুব সতর্কতার সাথে ভাগ করবে। কোনো কমবেশি হলে সেটুকু সুদ হয়ে যাবে এবং গুনাহ হবে। তবে গোশতের সাথে যদি কল্লা, পায়া ও চামড়া ইত্যাদিও ভাগ করে, তাহলে কোনো ভাগে গোশত কম গিয়ে উল্লিখিত বস্তুগুলো যদি বেশি যায় এবং ওজনে সমান হয়, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কেউ যদি কল্লা বা পায়া বেশি নেয়, তাহলেও সুদ হয়ে যাবে এবং গুনাহ হবে।
কোরবানির চামড়া বা গোশত যতক্ষণ পর্যন্ত কোরবানি দাতার কাছে উপস্থিত থাকে, ততক্ষণ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে তিন প্রকারের এখতিয়ার থাকে-
০১. নিজে খাওয়া বা ব্যবহার করা।
০২. ধনী লোকজনকে খাওয়ানো এবং ব্যবহার করতে দেওয়া।
০৩. গরিব-মিসকিনদের মধ্যে সদকা করে দেওয়া।
যদি কোরবানির চামড়া বা গোশত নগদ অর্থ অথবা এমন কোনো বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করা হয়, যেটা সরাসরি ব্যবহার করা যায় না, তাহলে উল্লিখিত তিন এখতিয়ার থেকে তৃতীয়টি নির্দিষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ, সদকা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। নিজে খাওয়া বা ধনীদেরকে খাওয়ানো জায়েয থাকে না; চাই সদকা করার নিয়তে বিক্রি করুক, অথবা নিজে ভোগ করার জন্যে বিক্রি করুক। কোরবানির চামড়া অক্ষত রেখে কোরবানি দাতা ব্যবহার করতে পারে। যেমন- ব্যাগ, জুতা, জায়নামায, দস্তরখান ইত্যাদি বানিয়ে ব্যবহার করা। একইভাবে ধনী-গরিব যে কাউকে হাদিয়া দিতে পারে। কারো খেদমতের বিনিময় হিসেবে দেওয়া যাবে না। যেমন- চাকর, মসজিদের ইমাম বা মুয়াযযিন কাউকে বেতন হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। তবে যদি বিক্রি করে, তাহলে যে মূল্য পাওয়া যাবে, সেটা নিজে খেতে পারবে না, সন্তানাদিকে খাওয়াতে পারবে না। বিনিময় হিসেবেও কোথাও দেওয়া যাবে না। মসজিদ নির্মাণের কাজেও না; বরং অভাবীদেরকে সদকা করে দিবে। যদি তা না করে, তাহলে ঐ পরিমাণ টাকার সদকা জরুরি; অন্যথায় কোরবানির ক্ষতি হবে।
মাসয়ালা: কোরবানির চামড়া ও গোশতের একই হুকুম। যেমনিভাবে গোশত ধনী ব্যক্তিকে দিতে পারে এবং নেসাবের মালিক ব্যক্তি খুশিতে নিতে পারে; নিষেধ নয়, তেমনিভাবে তাকে চামড়া দেওয়াও জায়েয। আর যে ধনী বা গরিবকে চামড়া বিনামূল্যে হাদিয়া হিসেবে দেওয়া হবে, সে তা বিক্রি করে মূল্য নিজের কাজে লাগাতে পারে। তবে যদি কোরবানি দাতা চামড়া বা গোশত বিক্রি করে, তাহলে তার মূল্যের হকদার শুধু গরিব মানুষ; ধনীদেরকে দেওয়া সঠিক নয়।
মাসয়ালা: কোরবানির চামড়া বিক্রীত টাকা দিয়ে জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ছাত্রদেরকে বইপুস্তক, কুরআন-কিতাব, চকশ্লেট, খাতা-কলম কিনে দেওয়া জায়েয।
মাসয়ালা: অনেক লোক জবাইয়ের আগেই চামড়া বিক্রি করে ফেলে। মনে রাখতে হবে, জবাইয়ের আগে চামড়া বিক্রি করে ফেলা হারাম।
মাসয়ালা: কোনো শরীক যদি নিজের অন্যান্য শরীকের নিকট থেকে চামড়ার অংশ কিনে নেয়, তাহলে পুরো চামড়া সে ব্যবহার করতে পারবে।
মাসয়ালা: শরীকরা ইচ্ছা করলে চামড়া কেটে ভাগও করে নিতে পারে। কিন্তু কাটলে চামড়ার দাম কমে যায়। সুতরাং যদি চামড়া নিজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে কেটে টুকরো টুকরো করলে গরিবদের ক্ষতি হবে। এজন্যে কেটে ভাগ করে নেওয়া উচিত নয়।
মাসয়ালা: বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, অথবা ছেলেমেয়ে, নাতি- নাতনি কিংবা স্বামী/স্ত্রীকে কোরবানির চামড়া হাদিয়া দেওয়া জায়েয। কিন্তু বিক্রি করার পর চামড়ার মূল্য এদেরকে দেওয়া জায়েয নয়।
মাসয়ালা : কোরবানির চামড়া বিক্রি করার পর তার মূল্য নিজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। যদি কেউ নিজে ব্যবহার করে, তাহলে ব্যবহৃত পরিমাণ বদল সদকা করা ওয়াজিব। সদকা না করলে কোরবানির সাওয়াব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কোরবানি দাতা যদি নিজে জবাই করার সাহস রাখে এবং জবাইয়ের হুকুম- আহকাম সম্পর্কে অবগত থাকে, তাহলে নিজের পশু নিজ হাতে কোরবানি করাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের কোরবানি নিজ হাতে জবাই করতেন। হাদীসে আছে, আনাস (রাঃ) বলেন-
نَحَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ سَبْعَ بُدْنٍ قِيَامًا وَضَحَى بِالْمَدِينَةِ كَبُشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ
রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নহর (কোরবানি) করেছেন। আর মদিনায় দুটি মোটাতাজা শিংবিশিষ্ট ভেড়া কোরবানি করেছেন।
[বুখারী: হাদীস- ১৭১৪]
নিজের কোরবানি নিজ হাতে জবাই করার সামর্থ্য না থাকলে উপস্থিত থেকে কাউকে দিয়ে জবাই করানো ভালো।
আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِفَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا : قُوْمِي إِلَى أُضْحِيَّتِكِ فَاشْهَدِيْهَا فَإِنَّ لَكِ بِأَوَّلِ قَطْرَةٍ تَقْطُرُ مِنْ دَمِهَا يُغْفَرُ لَكِ مَا سَلَفَ مِنْ ذُنُوبِكِ قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ هَذَا لَنَا أَهْلِ الْبَيْتِ خَاصَّةً أَوْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِينَ عَامَّةً؟ قَالَ : بَلْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِينَ عَامَّةً
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি তোমার কোরবানির সামনে যাও এবং কোরবানি প্রত্যক্ষ করো। কেননা, কোরবানির রক্তের প্রথম ফোঁটা যখন পড়বে, তখনই তোমার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ফাতেমা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কি বিশেষভাবে আমাদের পরিবারের জন্যে, নাকি ব্যাপকভাবে আমাদের ও সমস্ত মুসলমানের জন্যে? নবীজি বললেন, ব্যাপকভাবে আমাদের ও সমস্ত মুসলমানের জন্যে।
[হাকেম: হাদীস নং- ৭৫২৫]
উপস্থিত না থেকেও অন্যের মাধ্যমে কোরবানির পশু জবাই করানো জায়েয; কিন্তু নিজে জবাই করলে, অথবা জবাইয়ের সময় নিজে উপস্থিত থাকলে যে আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং আল্লাহ তায়ালার জন্যে যে মহব্বত অন্তর্ভুক্ত থাকে, তৃতীয় পন্থায় তা পুরোপুরি থাকে না। এজন্যে কোরবানির উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়।
একটি হাদীসে আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الدُّبْحَةَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর অনুগ্রহ করাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং যদি হত্যা করতে বাধ্য হও, তাহলে উত্তম পন্থায় হত্যা করো। যদি তোমাদের কোনো পশু জবাই করতে হয়, তাহলে উত্তম পন্থায় জবাই করো। ছুরি ধার করে নিয়ো, যাতে যথাসম্ভব পশুকে স্বস্তি দেওয়া যায়।
[মুসলিম: হাদীস- ৫১৬৭]
মাসয়ালা: কসাইরা পশু জবাই করার পর ঠান্ডা হতে দেয় না; চামড়া খোলা শুরু করে দেয়। এই কাজটি হারাম। মনে রাখতে হবে, জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে চামড়া খুলতে হবে।
পশু জবাই করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলেই জবাইয়ের সময় পশুর সাথে যেনতেন আচরণ উচিত নয়। পশুকে ভীতসন্ত্রস্ত করা, শোয়ানোর পর টেনে-হিঁচড়ে এদিক-সেদিক নেওয়া, পা ধরে টানাটানি করা, ছোট পশুর উপর বিনা প্রয়োজনে চড়ে বসা, পশু শোয়ানোর পর জবাই করতে বিলম্ব করা ইত্যাদি নির্দয় আচরণের শামিল। এজন্যে জবাইয়ের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খুব খেয়াল রাখা চাই-
এসব বিষয় শুধু কোরবানির পশুর সাথে বিশিষ্ট নয়; বরং যে কোনো পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়।
ছুরি, চাকু, তলোয়ার, বাঁশের নেইল ও ধারালো পাথর দ্বারা পশু জবাই করা জায়েয। শর্ত হচ্ছে বস্তুটিতে রগ কাটার ধার থাকতে হবে এবং রগ কেটে প্রবহমান রক্ত বের করতে হবে। তবে দাঁত ও নখ দিয়ে জবাই করা জায়েয নয়।
মাসয়ালা: ধারালো বস্তু দিয়ে রগ না কেটে কোনো ভারী জিনিস দ্বারা জখম করলে পশু হালাল হবে না। জখম থেকে যদি রক্ত বেরও হয়, তবুও জায়েয হবে না।
মাসয়ালা: গলায় চারটি রগ আছে- শ্বাসনালি, খাদ্যনালি আর দুটি রক্তনালি। এই চারটি রগের অন্তত তিনটি কাটা ফরয। একটি বা দুটি কাটলে পশু হালাল হবে না।
মাসয়ালা: পাক জায়গায় পশু জবাই করা বাঞ্ছনীয়। নাপাক স্থানে পশু জবাই করা উচিত নয়।
মাসয়ালা: ধারালো পাথর ও বাঁশের নেইল দ্বারা জবাই করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষের নেই। এজন্যে এগুলো দিয়ে পশু জবাই করতে গিয়ে খামোখা পশুকে কষ্ট দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা বোকামি সাব্যস্ত হবে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসব পশু হালাল, সেগুলো খাওয়া জায়েয হওয়ার জন্যে জবাই শর্ত। আর জবাই সহীহ হওয়ার জন্যে বিসমিল্লাহ বলা শর্ত। যদি কেউ জবাইয়ের সময় ইচ্ছা করে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয়, তাহলে পশু মুরদার সাব্যস্ত হবে এবং সেটা খাওয়া জায়েয হবে না।
মাসয়ালা: কোনো মুসলমান জবাই করার সময় যদি বিসমিল্লাহ বলার কথা ভুলে যায়, তাহলেও তার জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয।
মাসয়ালা: স্বাভাবিক জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ আর জবাই একসঙ্গে হওয়া জরুরি। অর্থাৎ, বিসমিল্লাহ পড়তে পড়তে জবাই করবে। বিসমিল্লাহ পড়ার পর জবাইয়ের আগে আর কোনো কাজ করবে না। যদি কেউ ছাগল শোয়ায়ে বিসমিল্লাহ পড়ে, তারপর সেই ছাগল ছেড়ে দেয়। এরপর আরেকটি ছাগল এনে ঐ বিসমিল্লাহর ওপর জবাই করে, তাহলে জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয হবে না।
মাসয়ালা: জবাইয়ের কাজে যতজন শরীক হয়, সবারই বিসমিল্লাহ বলা জরুরি নয়। যে ব্যক্তি ছুরি চালায়, সে বিসমিল্লাহ বললেই যথেষ্ট। অবশ্য যে ব্যক্তি ছুরি চালানোর কাজে সহায়তা করে, তারও বিসমিল্লাহ বলা আবশ্যক।
মাসয়ালা : অনেকে কোরবানির জন্যে দোয়া পড়া খুব জরুরি মনে করে। কিতাবাদিতে কোরবানির দোয়া লেখা আছে; কিন্তু সেই দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব। ঐ দোয়া না পড়লেও কোরবানি সহীহ হবে।
মাসয়ালা: কোরবানির নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট; মুখে বলা জরুরি নয়। শুধু জবাইয়ের সময় মুখে 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলা জরুরি।
মাসয়ালা : শুধু 'আল্লাহু আকবার' বলে জবাই করলেও পশু হালাল হবে। শুধু 'বিসমিল্লাহ' বললেও হালাল হবে। তবে 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলা সুন্নাত।
মাসয়ালা: 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম' বলে জবাই করলেও পশু হালাল হবে। তবে পশু জবাইয়ের পরিবেশ দয়া ও অনুগ্রহের পরিপন্থী। এজন্যে 'রাহমান' ও 'রাহীম' যোগ করে বলা সমীচীন নয়।
মাসয়ালা: যদি 'খাজা বাবা আল্লাহু আকবার' অথবা 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার খাজা বাবা জিন্দাবাদ' বলে কোনো পশু জবাই করা হয়, তাহলে সেই পশু খাওয়া জায়েয হবে না।
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।
শৈশবে আকীকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকীকা করা যাবে। যার আকীকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকার গোশত খেতে পারবে।
[ইলাউস সুনান ১৭/১২৬]
কেউ কেউ কোরবানির পশুর সাথে আকীকা দিলে আকীকা সহীহ হবে না বলে মত দেন। কিন্তু নির্ভরযোগ্য আলেমগণ এ মতটি গ্রহণ করেননি। কোনো হাদীসে কোরবানির সাথে আকীকা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং কোরবানির সাথে
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَحَاضَتْ بِسَرِفَ، قَبْلَ أَنْ تَدْخُلَ مَكَّةَ وَهْىَ تَبْكِي فَقَالَ " مَا لَكِ أَنَفِسْتِ ". قَالَتْ نَعَمْ. قَالَ " إِنَّ هَذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِي مَا يَقْضِي الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ ". فَلَمَّا كُنَّا بِمِنًى أُتِيتُ بِلَحْمِ بَقَرٍ،
মুসাদ্দাদ (রাঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে প্রবেশ করলেন। অথচ মক্কা প্রবেশ করার পূর্বেই সারিফ নামক স্থানে তার মাসিক শুরু হল। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? মাসিক শুরু হয়েছে না কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এটা তো এমন এক বিষয় যা আল্লাহ আদম (আলাইহিস সালাম) এর কন্যা সন্তানের উপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি আদায় করে যাও, হাজীগণ যা করে থাকে, তুমিও অনুরুপ করে যাও। তবে তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। এরপর আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটা কি? লোকজন উত্তর করলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন।
[সহীহ বুখারী: ৫১৫০]
উচ্চারণ : ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।...বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، بسم الله الله أكبر.
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ কাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন। আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে মহান।
[আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৬; সুনান ইবনু মাজাহ : ৩১২১]
আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
اللهم مِنكَ وَلَكَ
অর্থ : হে আল্লাহ, (এই কোরবানির পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই জন্য উৎসর্গকৃত।
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার
بسم الله الله أكبر
অর্থ : মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহ সবচেয়ে মহান।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিন ওয়া খলিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাম।’
اللهم تقبل منا كما تقبل من حبيقك محمد وخليلك إبراهيم عليه السلام
অর্থ : হে আল্লাহ, এই কোরবানি আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন, যেভাবে আপনি তা কবুল করেছিলেন আপনার প্রিয় বন্ধুদ্বয় মুহাম্মদ (সাঃ) ও ইবরাহিম (আঃ) এর পক্ষ থেকে।
[মেশকাত : ১/১২৮]