রাসুল (সা.) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো পশু কোরবানি করেননি কিংবা অনুমোদনও করেননি। তাই এসব পশু দিয়েই কোরবানি করা সুন্নাত। শরিয়তের পরামর্শ হল, হৃষ্টপুষ্ট, বেশি গোশত, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর পশু কোরবানি
মাসয়ালা: গরু দিয়ে অন্যের খেত খাওয়ানো হারাম। তবে এমন পশু কোরবানি করা জায়েয এবং পশু হারাম নয়।
মাসয়ালা: যদি কোনো পশুর চামড়া এমনভাবে ঝলসে যায় যে, তাতে পশম ওঠে না; তবে তার গায়ে জখম নেই এবং তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ ও ঠিক আছে, তাহলে সেই পশুর কোরবানি জায়েয।
মাসয়ালা: যে পশুর পশম কেটে ফেলা হয়েছে, তার কোরবানি জায়েয।
মাসয়ালা: কোরবানির পশু শোয়াতে গিয়ে যদি আহত হয়, তাহলেও সেটার কোরবানি দুরস্ত হবে। জবাইয়ের সময় পশু দোষযুক্ত হলে সেটা ধর্তব্য নয়। কোরবানি দুরস্ত হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : যেই পশু নাপাক খায়, সেটা কয়েক দিন বেঁধে না রেখে কোরবানি করা জায়েয নয়। কয়েক দিন বেঁধে রাখার পর তার কোরবানি দুরস্ত হবে। উট চল্লিশ দিন, গরু-মহিষ বিশ দিন এবং ছাগল দশ দিন বেঁধে রাখা বাঞ্ছনীয়। বেঁধে রাখার মতলব হচ্ছে, এত দিন পর্যন্ত পশুটিকে নাপাক খাওয়া থেকে ফিরিয়ে রাখতে হবে।
মাসয়ালা : যেই পশুর শিং ভেঙে গেছে, কিন্তু গোড়া থেকে উঠে যায়নি, সেই পশুর কোরবানি জায়েয।
মাসয়ালা : যে পশুর শরীরে লোহা দিয়ে দাগ দেওয়া হয়েছে, অথবা হালচাষ, মাড়াই বা ঘানিতে ব্যবহার করার কারণে গায়ে দাগ পড়েছে, তার কোরবানি জায়েয। তবে কোরবানিতে বাহ্যিক দোষ না থাকা উত্তম।
মাসয়ালা : শূকর বা কুকুরের দুধ খেয়ে যদি কোনো ছাগলের বাচ্চা বড় হয়, তাহলেও সেটা হালাল। তবে কোরবানি করতে হলে কয়েক দিন হালাল ঘাস-পানি খাওয়াতে হবে। তারপর কোরবানি করতে হবে।
মাসয়ালা : মাদী ছাগল হরিণের সাথে মিলিত হয়ে যদি কোনো বাচ্চা হয়, তাহলে সেটা ছাগলই সাব্যস্ত হবে এবং সেটার কোরবানি দুরস্ত হবে।
মাসয়ালা: কোরবানির পশু দিয়ে কাজ নেওয়া মাকরূহ। ধনী-গরিব উভয়ের জন্যে একই কথা। উভয়ে কোরবানির পশুর দুধ দোহন ও পশম কাটার ক্ষেত্রে বরাবর। কোরবানির পশু জবাই করার আগে যদি তার দুধ দোহন করা হয়, অথবা তার পশম কাটা হয়, তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে তা থেকে ফায়দা গ্রহণ করা যাবে না।
একটি হাদীসে আছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন-
لا تَدْعُوا إِلَّا مُسِنَّةٌ إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ
কোরবানিতে তোমরা শুধু পরিপূর্ণ বয়সের পশু জবাই করো। তবে যদি পূর্ণ বয়সের পশু যোগাড় করতে তোমাদের কষ্ট হয়, তাহলে ছয় মাস বয়সী দুম্বা জবাই করো।
[আবু দাউদ: হাদীস- ২৭৯৯]
হাদীসে উল্লিখিত 'মুসিন্নাহ' বলা হয় ঐ পশুকে, যার দাঁত উঠেছে। দাঁত ওঠার পর পশু জোয়ান হয় এবং মাদী পশু গর্ভ ধারণের উপযুক্ত হয়। এমনই উপযুক্ত পশু কোরবানি করার জন্যে আদেশ করা হয়েছে। এ জাতীয় হাদীসের আলোকে ফোকাহায়ে কেরাম কোরবানির পশু উপযুক্ত হওয়ার জন্যে বয়সের সীমা বর্ণনা করে দিয়েছেন। সেই বিবরণ নিম্নরূপ-
নিম্নরূপ-
[আদ-দুররুল মুখতার: ৬/৬৩৫]
উল্লিখিত বয়স পার হয়ে পরের বছরে প্রবেশ করা আবশ্যক। উল্লিখিত বয়স পুরো হওয়ার দু'চার দিনও যদি নিশ্চিতভাবে বাকি থাকে, তা কোরবানি চলবে না। শুধু দুম্বার বেলায় একটু ছাড় আছে। যদি হয় ৬ মাস বয়সের দুম্বা এতটা হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, এক বছর বয়সী দুম্বার পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে সেগুলোর মতই দেখা যায়, তাহলে সেটার কোরবানি জায়েয হবে। অনেকের মতে ভেড়ার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য
[আদ-দুররুল মুখতার: ৬/৬৩৫]
পশুর বয়স যেহেতু কেউ রেকর্ড করে রাখে না, আবার উল্লিখিত বয়সের আগে পশুগুলোর দাঁতও ওঠে না, এজন্যে দাঁত ওঠাকে বয়স পূর্ণ হওয়ার আলামত সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে কোনো পশুর বয়স যদি নিশ্চিতরূপে পুরা হয়; কিন্তু তাঁর দাঁত না ওঠে, তাহলেও সেটা কোরবানি করা যাবে।
মাসয়ালা : ছাগলের বয়স এক বছর থেকে যদি এক-দুই দিনও কম থাকে, তাহলেও সেটার কোরবানি জায়েয হবে না।
মাসয়ালা : যখন কোনো পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস প্রবল হয়, তাহলে সেটার কোরবানি জায়েয হবে; অন্যথায় নয়। একটি পশু যদি দেখতে পূর্ণ বয়সের মনে হয়; কিন্তু নিশ্চিতরূপে জানা আছে যে, সেটার বয়স পূর্ণ হয়নি, তাহলে সেই পশুর কোরবানি দুরস্ত হবে না।
মাসয়ালা: কোনো পশু দেখতে কম বয়সের মনে হয়; কিন্তু নিশ্চিতরূপে জানা আছে যে, সেটার বয়স পূর্ণ হয়েছে, তাহলে সেটার কোরবানি দুরস্ত হবে।
বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েয; নিষেধ নয়। বন্ধ্যা হওয়া কোরবানির জন্যে দোষ নয়। যেমনিভাবে খাসী হওয়া এবং সঙ্গমে অপারগ হওয়া কোরবানির জন্যে দোষ নয়। বন্ধ্যা পশু (যেটার বাচ্চা হয় না) সাধারণত হৃষ্টপুষ্ট হতে থাকে। তার গোশত ভালো। অনেক বয়স হওয়ার পরও যদি কোনো মাদী পশু বাচ্চা না দেয়, তাহলে সেটা কোরবানি করা জায়েয।
[মাসায়েলে ঈদাইন ও কোরবানি: ১২৮ (ফাতাওয়া রহীমিয়া: ২/৯১)]
কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে।
[খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই।
[জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয।
[জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আ
যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
[জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলম
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
[জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪]